।
গল্পের নাম: মেলায় মোজাহিদের প্রতারণা
ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মোজাহিদুল হোসেন একটি প্রাইভেট অফিসে চাকরি করে। খুব সাধাসিধে জীবন তার। প্রতিদিন অফিস, বাড়ি আর মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা—এই নিয়েই কাটে সময়। ছেলেটা ভীষণ প্রযুক্তিপ্রেমী, ইন্টারনেট আর মোবাইল গ্যাজেট নিয়ে তার প্রবল আগ্রহ।
একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে সে শুনলো, আগারগাঁওয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্যের স্টল বসেছে। ছুটির দিনেই চলে গেল সে মেলায়। বিশাল ভিড়, নানা পণ্যের বাহার, আর গাইড মাইকে ভেসে আসা—
"২০ টাকায় সিম নিন, সাথে পাচ্ছেন ৫০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট!"
এটা শুনেই মোজাহিদের কৌতূহল বেড়ে গেল। এগিয়ে গেল সেই স্টলের দিকে। এক তরুণ, ঝাঁ চকচকে পোশাক পরা, হাসিমুখে বলল,
— "ভাই, শুধু ভোটার আইডি দিলেই হবে। কোনো ঝামেলা নেই। সাথে সাথে সিম, সাথে ৫০ জিবি ইন্টারনেট একটিভ!"
মোজাহিদ একটু ভাবলো, কিন্তু অফারটা এমন লোভনীয় ছিল যে আর না বলতে পারলো না। আইডি কার্ড দিল, ছবি তুলল, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিল—সবই করল। তারপর নতুন সিম হাতে নিয়ে খুশি মনে মেলা ঘুরে বাসায় ফিরে গেল।
ঘটনার মোড় ঘোরে
এক সপ্তাহ পর হঠাৎ মোজাহিদের ফোনে একটি মেসেজ আসে—
"আপনার নামে মোট তিনটি সিম রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।"
সে তো অবাক! সে তো শুধু একটাই সিম নিয়েছিল! সাথে সাথে বিটিআরসি-এর "সিম চেক" সার্ভিসে গিয়ে চেক করল—
সত্যিই! তার নামে তিনটি সিম চলছে, যেগুলোর দুইটির নাম-ঠিকানাই অজানা অপারেটরদের।
তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
— "কেউ কি আমার পরিচয় ব্যবহার করছে?"
— "এইসব সিম যদি অপরাধে ব্যবহৃত হয়?"
সে সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে সেই অতিরিক্ত দুইটি সিম বন্ধ করানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু প্রমাণ চাইলো তারা—কে, কবে, কোথা থেকে রেজিস্টার করেছে।
সতর্কতার শুরু
এ ঘটনার পর মোজাহিদুল ফেসবুকে একটি পোস্ট দিল—
"বন্ধুরা, আমি মেলায় গিয়ে সিম কিনেছিলাম। এখন দেখি আমার নামে তিনটি সিম চালু! কেউ আমার তথ্য ব্যবহার করে অবৈধভাবে সিম চালু করেছে। প্লিজ, মেলায় বা অস্থায়ী স্টল থেকে সিম কিনবেন না। তারা আপনার পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজ করতে পারে। সাবধান থাকুন!"
তার পোস্টটি ভাইরাল হলো। গণমাধ্যমেও উঠে এলো এই বিষয়টি।
শেষের বার্তা
মোজাহিদ এখন সবার জন্য একটি সচেতনতার মুখ। সে এখন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝায়—
কোনো ব্যক্তিগত তথ্য অচেনা কাউকে দিবেন না।
সিম কেনার আগে অপারেটরের অফিসিয়াল শাখা নিশ্চিত করুন।
নিয়মিত নিজের এনআইডি দিয়ে চেক করুন—কয়টি সিম চলছে।
মেলায় যারা এই কাজ করছিল, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান চালায়। কয়েকজন প্রতারক ধরা পড়ে।
উপসংহার
মোজাহিদের ছোট্ট ভুল থেকে সে যেমন শিক্ষা নিয়েছে, তেমনি সবাইকে সচেতন করতে পেরেছে। তার মত আর যেন কেউ প্রতারিত না হয়, সেই আশায় সে এখন কাজ করে যাচ্ছে।
এই গল্প আমাদের বলে,
"সাবধান হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ প্রতারকরা সুযোগ খুঁজেই থাকে।"
Comments
Post a Comment