লেখক: প্রিন্স নাইম
পাঠ পরিচিতি: প্রিন্স নাইম
সার্বিক সহযোগিতায় : সিদ্দিক খন্দকার , জিল্লুর রহমান
সালটা ছিল ২০০৯। আব্দুল মুকিতের বয়স তখন মাত্র ১২। হাফ প্যান্ট পরে, খালি পায়ে মাঠে দৌড়ানোই ছিল তার সবচেয়ে বড় আনন্দ। গ্রামের মাঠে প্রতিদিন বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলাটা ছিল ঠিক নামাজের মতো নিয়মিত। আর খেলায় যদি জেতা হতো, তাহলে রাতে ঘুমানোর আগে সে নিজের ছোট্ট ডায়রিতে সেই দিনের ম্যাচের ফল লিখে রাখতো।
"আজ আমরাই জিতলাম ৪-১ গোলে। আমি দুইটা গোল দিয়েছি!" — এমন অনেক লেখায় ভরা ছিল তার ডায়েরি।
মুকিতের খেলার প্রতি ভালোবাসা ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঠে সে ছিল যেন এক পাখির মতো — হালকা, দ্রুত আর মাটি ছোঁয়া পায়ের ছোঁয়ায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা খেলোয়াড়। একবার স্কুল টিমের হয়ে জেলায় খেলতে গিয়েছিল, তখন তার একটা গোলেই দল উঠে গিয়েছিল ফাইনালে।
আজ ২০২৫ সাল। আব্দুল মুকিত এখন ২৮ বছরের একজন অফিস কর্মী। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে কম্পিউটারের সামনে। কাজ, দায়িত্ব, বাস্তবতা — এসবের ভিড়ে যেন শৈশব হারিয়ে গেছে।
আজ হঠাৎ পুরনো একটা আলমারি ঘাঁটতে ঘাঁটতে সে পেয়ে গেল সেই ডায়েরিটা — হলদে পাতাগুলো, কালি কিছুটা মলিন, কিন্তু অনুভূতিগুলো একদম টাটকা।
সে একবার ডায়েরির পাতা উল্টালো… "৩০শে জুলাই, ২০০৯ — আমি গোল করেছি, বাবা দেখে খুব খুশি হয়েছিল। বলেছিলেন আমি একদিন বড় প্লেয়ার হবো।" এই লেখাটা দেখে চোখে জল চলে আসে মুকিতের। বাবা তো নেই আর।
সে চুপচাপ ডায়েরিটা কোলে নিয়ে বসে থাকে। বাইরে মাঠে বাচ্চারা খেলছে — ছেলেবেলার সেই চিৎকার, গোল! গোল! শব্দটা যেন আবার কানে বাজে।
মুকিত মনে মনে হাসে। ভাবে, "সময় সবকিছু কেড়ে নেয়, কিন্তু শৈশবকে নয়। ওটা তো রয়ে যায়… ডায়রির পাতায়, মনে, আর বুকের এক কোণে।"
✅ শেষ কথা:
মুকিত জানে, জীবনে অনেক কিছু পাল্টাবে — চেহারা, কাজ, সমাজ। কিন্তু সে জানে, সেই ১২ বছরের ছেলেটা এখনো তার ভেতরেই কোথাও খেলছে।
Comments
Post a Comment